Headlines
Loading...
 শিশুগ্রহের সন্ধান মিলেছে এবি অরিগায়

শিশুগ্রহের সন্ধান মিলেছে এবি অরিগায়


নতুন নতুন গ্রহ-নক্ষত্রের সন্ধান এবং এগুলো সৃষ্টির রহস্য সম্পর্কে জানতে বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করেন শক্তিশালী ও বিশালাকৃতির সব টেলিস্কোপ। এমনই একটি টেলিস্কোপের সাহায্যে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নতুন একটি গ্রহের জন্মপ্রক্রিয়ার হদিস পেয়েছেন। আসলে ঠিক গ্রহ নয়, শিশুগ্রহ। জন্মের একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছে গ্রহটি। গ্রহ-গঠনের একদম প্রাথমিক পর্যায়ের ছবি এর আগে বিজ্ঞানীরা তুলতে পারেননি। সেক্ষেত্রে এটিই প্রথম শিশুগ্রহের ছবি।

ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির তথ্য ও উপাত্ত ব্যবহার করে একটি গবেষণা দল কাজ শুরু করে। এজন্য তারা ব্যবহার করে চিলির আতাকমা মরুভূমিতে স্থাপিত বিশালাকার টেলিস্কোপটি। ৮.২ মিটার ব্যাসের চারটি এবং ১.৮ মিটার ব্যাসের চারটি প্রতিসারক দর্পন টেলিস্কোপের সমন্বয়ে তৈরি এই ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ। এর সাহায্যেই এবি অরিগা নক্ষত্রমণ্ডলকে ঘিরে নতুন গ্রহ সৃষ্টির প্রাাথমিক পর্যায়ের সেই ছবি তুলতে সক্ষম হয়েছেনে গবেষকেরা।

ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের ধারণা, নতুন জন্ম নেওয়া তারাদের চারপাশে ঘূর্ণ্যয়মান ধুলাবালির ডিস্ক বা বলয় তৈরি হয়। সেই ডিস্ক থেকেই পরে তৈরি হয় নতুন গ্রহ। ঠান্ডা গ্যাস ও ধূলিকণার ঘূর্ণনে জমাটবদ্ধ হয়ে এই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। এটা আগে কখনো সরাসরি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয়নি বিজ্ঞানীদের। এবি অরিগার শিশুগ্রহ সেই সুযোগটিই করে দিল তাঁদের।

পৃথিবী থেকে প্রায় ৫২০ আলোকবর্ষ দূরে এবি অরিগার অবস্থান। এটি উত্তপ্ত, বিশাল আকৃতির এবং নীল রংয়ের এক নতুন নক্ষত্রমণ্ডল। এর চারপাশে ঠাণ্ডা গ্যাস ও ঘূর্ণায়মান ধূলিকণার ডিস্ক বা বলয় রয়েছে। এই তারকামণ্ডলের মূল নক্ষত্রের নাম ক্যাপেলা, এটি রাতের আকাশের ষষ্ঠ উজ্জ্বলতম নক্ষত্র।

ফ্রান্সের পিএসএল বিশ্ববিদ্যালয়ে অবজারভেটরির ডি প্যারিসের একটি দল শিশুগ্রহ নিয়ে এই গবেষণাটি চালিয়েছেন। অ্যান্টনি বোকালেটির নেতৃত্বে দলটি গত ২০ মে অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস জার্নালে একটি গবেষণাপত্রে এই আবিস্কারের খবর জানিয়েছেন।

অ্যান্টনি বোকোলেটি জানান, এর আগে সৌরজগতের বাইরে কয়েক হাজার গ্রহ খুঁজে পাওয়া গেছে, কিন্তু এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা গেছে খুব অল্প। নতুন গ্রহ সৃষ্টির রহস্য জানতে হলে অপেক্ষাকৃত কম বয়সের নতুন গ্রহ সিস্টেমগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সৌভাগ্যের বিষয় হলো এবি অরিগা ঠিক এমনই একটা সময় পার করছে।

ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির টেলিস্কোপে তোলা ছবিগুলোতে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নক্ষত্রমণ্ডলটির চারপাশে ঘূর্ণ্যমান ধূলিকণা এবং গ্যাসের কয়েকটি কুণ্ডলি চিহ্নিত করেছেন। ঘূর্ণনের ফলে সেগুলো জমাটবদ্ধ হয়ে কয়েকটি সর্পিল বাহু তৈরি করেছে। এটাই আসলে নতুন গ্রহ গঠনের লক্ষণ। অবশ্য নতুন এই নক্ষত্রমণ্ডলের চারপাশের ডিস্ক বা বলয়ের খুব স্পষ্ট ছবি তোলা সম্ভব হয়নি।

এবি অরিগার চারপাশে ঘূর্ণায়মান ধুলাবালির ডিস্কএবি অরিগার চারপাশে ঘূর্ণায়মান ধুলাবালির ডিস্ক

এবি অরিগা নক্ষত্রমণ্ডলের একটি বাঁক বা মোচড় আছে। এটা দেখলে বোঝা যায় নতুন গ্রহ সৃষ্টি হচ্ছে। গ্রহ গঠনের কিছু তাত্ত্বিক মডেলে নতুন গ্রহদের জন্মপ্রক্রিয়া সম্পর্কে এমন কথাই বলা হয়েছে। তাই গবেষকরা অনেকটাই নিশ্চিত এবি অরিগায় নতুন গ্রহের জন্ম হতে চলেছে।

গবেষক দলটি জানিয়েছে, সর্পিল বাহুগুলো স্পষ্ট করে দেখার জন্য আরও শক্তিশালী ও বড় টেলিস্কোপ দরকার। বোকালেটির মতে, নতুন গ্রহের চারপাশে গ্যাসের গতিশীলতা কিভাবে গ্রহ গঠনে ভূমিকা রাখে তা আরও সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে যদি গ্রহের চারপাশের গ্যাস এবং তাদের গতি পর্যবেক্ষণ করা যায়।

গ্রহের উৎপত্তির যে তত্ত্ব জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা বলেন, তার প্রত্যক্ষ প্রমাণের জন্য এই গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্যবেক্ষণ এমন প্রক্রিয়ার খুঁটিনাটি প্রত্যক্ষভাবে দেখার পথে একধাপ এগিয়ে গেছে, সামনে নিশ্চয়ই এমন প্রক্রিয়া আরও পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হবে। তখন নিশ্চিত করে বলা যাবে, কীভাবে গ্রহগুলোর উদ্ভব ঘটে।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়।

সূত্র: অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোফিজিকস, ইএসও ডট অর্গ ও ভাইস ডট কম

0 Comments: